settings icon
share icon
প্রশ্ন

মর্মনবাদ কী একটি ভ্রান্ত ধর্মমত? মর্মনবাদীরা কী কী বিশ্বাস করে?

উত্তর


মর্মন ধর্ম (মর্মনবাদ) যার অনুসারীরা মর্মন নামে পরিচিত এবং Latter Day Saints (LDS) দুইশ’ বছরেরও কম সময় আগে যোষেফ স্মীথ নামক একজন লোকের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি এই দাবী করেন যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি পিতা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্টের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন যাঁরা তাকে এই কথা বলেছেন যে, সমস্ত মন্ডলী এবং তাদের যাবতীয় ধর্মীয় রীতি-নীতি ছিল ধ্বংসাত্মকমূলক। এর পর পরই যোষেফ স্মীথ সম্পূর্ণ নতুন একটি মন্ডলী স্থাপন করতে শুরু করেন এবং দাবী করেন যে, এটিই হচ্ছে “পৃথিবীর একমাত্র সত্য মন্ডলী।” মর্মনবাদের সমস্যা হলো- এটি হচ্ছে একটি বিরোধপূর্ণ বা অসঙ্গতিপূর্ণ, পরিবর্তীত এবং বাইবেলের সাথে বাড়তি কিছু যোগ করে এর কলেবর বৃদ্ধিকরণমূলক ধর্মীয় সংগঠন। যারা খ্রীষ্টিয়ান তাদের এটি বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই যে, বাইবেল সত্য নয় এবং এটি আমাদের জন্য যথেষ্টও নয়। সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ও তাঁর উপর আস্থা রাখার মানে হলো তাঁর (ঈশ্বরের) বাক্যে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে এটি যে ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিত তা বিশ্বাস করা, অর্থাৎ এটি যে তাঁর (ঈশ্বরের) নিকট থেকেই এসেছে তা বিশ্বাস করা (২তীমথিয় ৩:১৬ পদ)।

মর্মনবাদ বিশ্বাস করে যে, প্রকৃতপক্ষে স্বর্গীয়ভাবে অনুপ্রাণিত বাক্যগুলোর কেবলমাত্র একটি উৎস নয়, কিন্তু এর চার চারটি উৎস রয়েছে: ১) পবিত্র বাইবেলকে “যত দূর পারা যায় তত দূর সঠিকভাবে অনুবাদ করা হয়েছে।” যে সব পদগুলোকে সঠিক অনুবাদ নয় বলে বিবেচনা করা হয় সেগুলো সব সময় স্পষ্ট করা সম্ভব হয় না। ২) “দি বুক অফ মর্মন”- যেটি স্মীথ কর্তৃক অনুবাদিত এবং ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে ছাপানো হয়েছিল। স্মীথ দাবী করেছিলেন যে, এটিই হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে “সবচেয়ে সঠিক বই” এবং “অন্য যে কোন বইয়ের তুলনায়” লোকেরা এটির আদেশ বা নীতিসূত্রগুলো অনুসরণ করে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে। ৩) ধর্মীয় মতবাদ এবং অঙ্গীকারসমূহ হলো “পুনরায় স্থাপিত যীশু খ্রীষ্টের মন্ডলী” সম্পর্কিত আধুনিক প্রকাশভঙ্গির সংমিশ্রণ, ৪) The Pearl of the Great Price – এটি মর্মনবাদীদের মতবাদ ও শিক্ষাসমূহকে যেগুলো বাইবেল থেকে হারিয়ে গেছে এবং পৃথিবী সৃষ্টি সম্বন্ধে এর নিজস্ব তথ্যগুলো যোগ করে থাকে সেগুলোকে আরও পরিস্কার বা প্রাঞ্জল করতে বিশেষভাবে বিবেচিত।

যারা মর্মনবাদে বিশ্বাসী তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলো বিশ্বাস করে: তিনি (ঈশ্বর) সব সময়ের জন্য সারা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নন বটে, কিন্তু তিনি সৎ বা ধার্মিকতাপূর্ণ জীবন্ত বিষয় ও অদম্য চেষ্টার মধ্য দিয়ে তাঁর এই মযাদা অর্জন করেন। তারা বিশ্বাস করে যে, পিতা ঈশ্বরকে “মানুষের মত ধরা ও স্পর্শ করা যায় এমন মাংস ও হাড়” আছে। যদিও ব্রীকহাম ইয়ং আধুনিক মর্মন নেতাদের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছেন তবুও তিনি এই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, প্রকৃতপক্ষে আদমই ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্টের পিতা। বিপরীতভাবে খ্রীষ্টিয়ানরা ঈশ্বর সম্বন্ধে যা যা জানে সেগুলো হলো: সত্যবান ঈশ্বর একজনই আছেন (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪; যিশাইয় ৪৩:১০; ৪৪:৬-৮ পদ), তিনি সব সময়ের জন্যই আছেন এবং থাকবেনও সব সময়ের জন্য (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৭:২৭; গীতসংহিতা ৯০:২; ১তীমথিয় ১:১৭ পদ) এবং তাঁকে সৃষ্টি করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই হলেন সৃষ্টিকর্তা (আদিপুস্তক ১অধ্যায়; গীতসংহিতা ২৪:১; যিশাইয় ৩৭:১৬ পদ)। তিনি নিষ্কলঙ্ক এবং তাঁর মত এমন আর কেউ নেই (গীতসংহিতা ৮৬:৮; যিশাইয় ৪০:২৫ পদ)। পিতা ঈশ্বর কোন মানুষ নন এবং কখনই তেমনটি ছিলেনও না (গণনাপুস্তক ২৩:১৯; ১শমূয়েল ১৫:২৯; হোশেয় ১১:৯ পদ)। তিনি হলেন আত্মা (যোহন ৪:২৪ পদ) এবং আত্মা কখনই মাংস ও হাড় দিয়ে তৈরী হতে পারে না (লূক ২৪:৩৯ পদ)।

মর্মন মতবাদের বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে যে, এই জীবনের পরে অর্থাৎ পরজীবনে বিভিন্ন ধরনের স্তর বা ধাপ রয়েছে অথবা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্বর্গরাজ্য রয়েছে : অত্যন্ত সুন্দর রাজ্য, পার্থিব রাজ্য. দূরবর্তী রাজ্য এবং বহিঃস্থ অন্ধকার- যেখানে মানুষ তার এই জীবনে যা যা বিশ্বাস করেছে ও কাজ করেছে তার উপর ভিত্তি করে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে। বিপরীত দিকে বাইবেল আমাদের বলে যে, আমরা যীশু খ্রীষ্টকে আমাদের জীবনে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করেছে কি না তার উপর ভিত্তি করেই মৃত্যুর পর আমাদের স্বর্গে অথবা নরকে যাওয়া নির্ভর করে। পার্থিব দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ হচ্ছে বিশ্বাসী হিসাবে আমরা এখন প্রভুর সাথে যুক্ত রয়েছি ((২করিন্থীয় ৫:৬-৮ পদ)। অবিশ্বাসীদের নরকে অথবা মৃতস্থানে পাঠানো হবে (লূক ১৬:২২-২৩ পদ)। দ্বিতীয়বার যীশু যখন আবার আসবেন তখন আমরা নতুন দেহ ধারণ করব (১করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৪ পদ)। সেখানে বিশ্বাসীদের জন্য নতুন মহাকাশ (স্বর্গ) ও নতুন পৃথিবী থাকবে (প্রকাশিত বাক্য ২১:১ পদ) এবং যারা অবিশ্বাসী তাদের অনন্তকালের জন্য আগুনের হ্রদে নিক্ষেপ করা হবে (প্রকাশিত বাক্য ২০:১১-১৫ পদ)। মৃত্যুর পর মুক্তি বা পরিত্রাণ পাওয়ার দ্বিতীয় আর কোন সুযোগ নেই (ইব্রীয় ৯:২৭ পদ)।

মর্মনবাদে বিশ্বাসী নেতৃবর্গ এই শিক্ষা দেয় যে, যীশুর মানবদেহ ধারণ ছিল পিতা ঈশ্বর ও মরিয়মের শারীরিক মিলনের ফল। তারা এও বিশ্বাস করে যে, যীশু হলেন একজন দেবতা। তাদের মতে, যে কোন মানুষও দেবতা হতে পারে। মর্মনবাদ আরও শিক্ষা দেয় যে, বিশ্বাস এবং কাজের সংমিশ্রণে পরিত্রাণ বা উদ্ধার লাভ করা যেতে পারে। এর বিপরীতে ঐতিহাসিকভাবে খ্রীষ্টিয়ানদের শেখানো হয় যে, ঈশ্বরের মত সম্মান বা পদমযাদা কেউ-ই লাভ করতে পারে না- একমাত্র তিনিই (ঈশ্বরই) পবিত্র (১শমূয়েল ২:২ পদ)। কেবলমাত্র তাঁকে (ঈশ্বরকে) বিশ্বাস করার মধ্য দিয়েই আমরা তাঁর দৃষ্টিতে পবিত্র হতে পারি (১করিন্থীয় ১:২ পদ)। যীশু হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র (যোহন ৩:১৬ পদ), একমাত্র তিনিই নিষ্কলঙ্ক জীবন যাপন করেছেন এবং এখন তিনি পিতার দক্ষিণে স্বর্গের সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে উপবিষ্ট আছেন (ইব্রীয় ৭:২৬ পদ)। যীশু এবং ঈশ্বর হলেন একই সত্তা, একমাত্র যীশুই দৈহিকভাবে জন্মগ্রহণের আগে থেকেই বর্তমান ছিলেন (যোহন ১:১-৮; ৮:৫৬ পদ)। যীশু আমাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, মৃত্যুকে জয় করে উঠেছেন এবং একদিন সবাই স্বীকার করবে যে, যীশু খ্রীষ্টই হলেন প্রভু (ফিলিপীয় ২:৬-১১ পদ)। যীশু আমাদের এই কথা বলেন যে, আমরা আমাদের নিজেদের কাজের দ্বারা স্বর্গে যেতে পারি না এবং একমাত্র তাঁকে বিশ্বাস করেই স্বর্গে যাওয়া সম্ভব (মথি ১৯:২৬ পদ)। আমাদের পাপের জন্য আমরা সকলেই অনন্ত শাস্তির যোগ্য, কিন্তু ঈশ্বরের অসীম ভালবাসা ও অনুগ্রহ আমাদের এই অবস্থা থেকে বের করে এনেছে। রোমীয় ৬:২৩ পদ লেখা আছে, “পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু, কিন্তু ঈশ্বর যা দান করেন তা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন।”

তাই সুস্পষ্টভাবে এটি বলা যায় যে, পরিত্রাণ বা উদ্ধার পাওয়ার জন্য কেবলমাত্র একটি পথই রয়েছে, আর সেটি হলো ঈশ্বর এবং তাঁর একমাত্র পুত্র যীশুকে জানা (যোহন ১৭:৩ পদ)। এটি কোন কাজের ফল দ্বারা নয় কিন্তু বিশ্বাসের দ্বারা পাওয়া যায় (রোমীয় ১:১৭; ৩:২৮ পদ)। এটি গ্রহণ করার জন্য আমরা কে এবং আমরা কি করেছি তাতে কিছু যায়-আসে না, আমরা নির্বিধায় এটি গ্রহণ করতে পারি (রোমীয় ৩:২২ পদ)। কেননা প্রেরিত ৪:১২ পদে লেখা আছে, “পাপ থেকে উদ্ধার আর কারও কাছে পাওয়া যায় না; কারণ সারা জগতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি।”

যেহেতু মর্মনবাদীরা সচরাচর বন্ধুভাবাপন্ন, ভালবাসাপূর্ণ এবং দয়াশীল, সেহেতু তারা মিথ্যা তথা ভ্রান্ত ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত ও প্রলোভিত, সেই কারণে তারা ঈশ্বরের স্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে যীশু খ্রীষ্টের এবং পরিত্রাণ বা উদ্ধারের মূলভাবের বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে।

English



বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

মর্মনবাদ কী একটি ভ্রান্ত ধর্মমত? মর্মনবাদীরা কী কী বিশ্বাস করে?
© Copyright Got Questions Ministries