settings icon
share icon
প্রশ্ন

আপনি কি বিলাপ পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? বিলাপ পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?

উত্তর


লেখকঃ বিলাপ পুস্তকটি এটির লেখক কে তা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলে না। ঐতিহ্য বা প্রথানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ভাববাদী যিরমিয়ই এই পুস্তকটি লিখেছেন। এই বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য, কারণ লেখক নিজেই বাবিল কর্তৃক যিরূশালেম ধ্বংস করার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। আর যিরমিয় হলেন এই কাজের একজন যোগ্যতাসম্পন্ন লোক (২বংশাবলি ৩৫:২৫; ৩৬:২১-২২ পদ)।

লেখার সময়কালঃ বিলাপ পুস্তকটি সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৬-৫৭৫ অব্দের মধ্যে কিংবা যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার পর পরই লেখা হয়েছে।

লেখার উদ্দেশ্যঃ যিহূদী জাতির পাপ কাজ ও অনুশোচনাহীন প্রতিমাপূজাজনিত অপরাধের ফলস্বরূপ ঈশ্বর বালিলীয়দের নিয়ে আসলেন যেন তারা যিরূশালেম নগরীকে অবরোধ, সেখানে লুটতরাজ চালায়, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও সেটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। রাজা শলোমনের মন্দির যেটি আনুমানিক ৪০০ শত বছর টিকে ছিল সেটি আগুনে পুড়ে একেবারে মাটির সাথে মিশে গেল। এই সমস্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভাববাদী যিরমিয় যিহূদা ও যিরূশালেমের প্রতি যা যা ঘটেছিল তার জন্য একজন বিলাপকারী হিসেবে এই পুস্তকটি লিখেছেন।

প্রধান পদসমূহঃ বিলাপ ২:১৭ পদ, “সদাপ্রভু যে সঙ্গল্প করিয়াচিলেন, তাহা সিদ্ধ করিয়াছেন; পুরাকালে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেই বাক্য পূর্ণ করিয়াছেন, তিনি নিপাত করিয়াছেন, দয়া করেন নাই; তিনি শত্রুকে তোমার উপরে আনন্দ করিতে দিয়াছেন, তোমার বিপক্ষদের শৃঙ্গ উচ্চ করিয়াছেন।”

বিলাপ ৩:২২-২৩ পদ, “সদাপ্রভুর বিবিধ দয়ার গুণে আমরা নষ্ট হই নাই; কেননা তাঁহার বিবিধ করুণা শেষ হয় নাই। নূতন নূতন করুণা প্রতি প্রভাতে! তোমার বিশ্বস্ততা মহৎ।”

বিলাপ ৫:১৯-২২ পদ, “হে সদাপ্রভু, তুমি অনন্তকাল সমাসীন; তোমার সিংহাসন পুরুষানুক্রমে স্থায়ী। কেন চিরতরে আমাদিগকে ভুলিয়া যাইবে? কেন এত দিন আমাদিগকে ত্যাগ করিয়া থাকিবে? হে সদাপ্রভু, তোমার প্রতি আমাদিগকে ফিরাও তাহাতে আমরা ফিরিব; পূর্বকালের সদৃশ নূতন সময় আমাদিগকে দেও। কিন্তু তুমি আমাদিগকে একেবারে অগ্রাহ্য করিয়াছ, আমাদের প্রতি অতিশয় ক্রোধাবিষ্ট হইয়াছ।”

সারসংক্ষেপঃ বিলাপ পুস্তকটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায় একটি করে আলাদা আলাদা কবিতা উপস্থাপন করে। মূল হিব্রু ভাষায় এই পদগুলো হলো ছন্দোবদ্ধ বা হেঁয়ালিপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি পদ হিব্রু বর্ণমালার পদান্বয়ী বর্ণ দিয়ে শুরু করা হয়েছে। যিরমিয় ভাববাদী বিলাপ পুস্তকটিতে যা উপলব্ধি করেন তা হলো, যিরূশালেমের উপর বিচারদন্ড আনার জন্য বাবিল ছিল ঈশ্বরের একটি হাতিয়ার বা উপলক্ষ (বিলাপ ১:১২-১৫; ২:১-৮; ৪:১১ পদ)। বিলাপ পুস্তকটি আমাদের কাছে এটি সু্স্পষ্ট করে যে, ঈশ্বর যে ক্রোধে পূর্ণ হয়েছিলেন তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল যিহূদী ও ইস্রায়েল জাতির পাপ ও তাঁর প্রতি বিরুদ্ধাচরণ (বিলাপ ১:৮-৯; ৪:১৩; ৫:১৬ পদ)। মর্মপীড়া বা বেদনার সময় বিলাপ বা শোক করাই সঠিক কাজ বটে, কিন্তু সেই সাথে যত দ্রুত সম্ভব অনুশোচনা ও অনুতপ্ত হওয়ার পথ বা উপায় বের করা উচিত (বিলাপ ৩:৪০-৪২; ৫:২১-২২ পদ)।

পূর্বাভাস বা পূর্ব লক্ষণঃ যিরমিয় ভাববাদী তার লোক ও তাদের নগরীর প্রতি অতিশয় গভীর অনুরাগের কারণে “ক্রন্দনকারী ভাববাদী” হিসেবে পরিচিত ছিল (বিলাপ ৩:৪৮-৪৯ পদ)। এই একই রকম দুঃখ-কষ্ট বা বেদনা ঈশ্বর তাঁর লোকদের পাপ ও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে পেয়েছিলেন যেটির প্রকাশ ঘটেছিল যীশু যখন যিরূশালেম মন্দিরের দিকে যাত্রা করেছিলেন এবং রোমীয় শাসক কর্তৃক সেই নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছিলেন (লূক ১৯:৪১-৪৪ পদ)। মুক্তিদাতা মশীহকে যিহূদী লোকেরা প্রত্যাখ্যান করায় ঈশ্বর তাদেরকে শাস্তি দিতে রোমীয়দের ব্যবহার করলেন। ঈশ্বর কিন্তু তাঁর সন্তানদের শাস্তি দিয়ে খুশী হন নি, আর তাই তো তিনি তাঁর সন্তানদের প্রতি তাঁর মহৎ করুণা প্রকাশার্থে যীশু খ্রীষ্টকে একটি উপায় বা মাধ্যম করে পাঠালেন যেন তিনি [যীশু] তাদের পাপের মূল্য পরিশোধ করেন। এমন একদিন আসছে যেদিন ঈশ্বর খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর সন্তানদের সমস্ত নেত্রজল মুছে দিবেন (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৭ পদ)।

বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ এত ভয়াবহ বিচারের মাঝেও আমাদের ঈশ্বর হলেন প্রত্যাশার ঈশ্বর (বিলাপ ৩:২৪-২৫ পদ)। আমরা তাঁর কাছ থেকে কত দূরে চলে যাই তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ আমাদের এই প্রত্যাশা আছে যে, আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসতে পারি এবং তাঁর কাছে করুণা ও ক্ষমা খুঁজে পেতে পারি (১যোহন ১:৯ পদ)। আমাদের ঈশ্বর হলেন ভালবাসার ঈশ্বর (বিলাপ ৩:২২ পদ), আর তিনি তাঁর মহৎ ভালবাসা ও করুণার কারণে তাঁর একমাত্র পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠালেন যেন আমরা আমাদের পাপের কারণে শাস্তি না পাই, কিন্তু যেন তাঁর সাথে অনন্তকাল ধরে বাস করতে পারি (যোহন ৩:১৬ পদ)। ঈশ্বরের বিশ্বস্ততা (বিলাপ ৩:২৩ পদ) এবং তাঁর উদ্ধার বা মুক্তি (বিলাপ ৩:২৬ পদ) আমাদেরকে মহৎ প্রত্যাশা ও সান্ত্বনা দান করে। তিনি অন্যান্য দেবতাদের মতো নির্লিপ্ত ও অনির্ভরশীল নন, কিন্তু তিনি হলেন সেই ঈশ্বর যিনি যারা তাঁর প্রতি ফিরবে তাদের উদ্ধার করবেন, স্বীকার করবে তাঁর সাহায্য ছাড়া তারা কিছুই করতে পারে না এবং সদাপ্রভুর দয়া বা করুণা যাচ্ঞা করবে যেন আমরা নষ্ট বা ধ্বংসপ্রাপ্ত না হই (বিলাপ ৩:২২ পদ)।

English



বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

আপনি কি বিলাপ পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? বিলাপ পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?
© Copyright Got Questions Ministries