settings icon
share icon
প্রশ্ন

ইব্রীয় পুস্তক

উত্তর


লেখকঃ যদিও কেউ কেউ প্রেরিত পৌলের লেখার মধ্যে ইব্রীয় পুস্তকটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তবে লেখকের নির্দিষ্ট পরিচয় ও এর রহস্য রয়েই গেছে। পৌলের অন্যান্য কাজের জন্য সাধারণ অভিবাদন অনুপস্থিত। উপরন্তু, ধারণা করা হয় যে, এই চিঠির লেখক অন্যদের দ্বারা প্রদত্ত জ্ঞান এবং তথ্যের উপর নির্ভর করেছিলেন, যারা খ্রীষ্ট যীশুর প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন (২:৩ পদ), যা পৌলের লেখকত্বকে সন্দেহজনক করে তোলে। কিছু বৈশিষ্ট্য এর লেখক হিসেবে লূককে; অন্যরা ইঙ্গিত দেয় যে, ইব্রীয় পুস্তকটি আপোল্লো, বার্ণবা, সীল, ফিলিপ বা আকিলা বা প্রিস্কিলা দ্বারা লিখিত হতে পারে। যারা লেখালেখি করেন সেই সব মানুষের হাত বিবেচনা না করে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা হলেন সমস্ত ধর্মগ্রন্থের ঐশ্বরিক লেখক (২তীমথিয় ৩:১৬ পদ); অতএব, ইব্রীয় পুস্তকটি বাইবেলের অন্যান্য পয়ষট্টিটি পুস্তকের মতো একই প্রামাণিক কর্তৃত্বের সাথে কথা বলে।

লেখার সময়কালঃ প্রাথমিক মণ্ডলীর পিতা ক্লীমেন্ত ৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ইব্রীয় পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। যাহোক, আভ্যন্তরীণ প্রমাণ যেমন চিঠিটি লেখার সময় তীমথি জীবিত ছিলেন এবং ৭০ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেম ধ্বংসের সাথে ঘটে যাওয়া পুরাতন নিয়মের বলি উৎসর্গের পদ্ধতির সমাপ্তি এমন কোন প্রমাণের অনুপস্থিতি ইঙ্গিত করে যে পুস্তকটি ৬৫ খ্রীষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল।

লেখার উদ্দেশ্যঃ স্বর্গীয় ড. ওয়াল্টার মার্টিন, খ্রীষ্টিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বই কিংডম অব দ্যা কাল্টসের লেখক, তার স্বাভাবিক ভাষায় ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন যে, ইব্রীয় পুস্তকটি একজন ইব্রীয় অন্য ইব্রীয়দের কাছে লিখেছিলেন এবং ইব্রীয়দের মতো ইব্রীয়দের অভিনয় বন্ধ করতে বলেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, অনেক প্রাথমিক যিহূদী বিশ্বাসী যিহূদী ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানে ফিরে গিয়েছিলেন যাতে তারা বেড়ে যাওয়া অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারে। এই চিঠি সেই অত্যাচারিত বিশ্বাসীদের জন্য যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহে চলতে থাকার জন্য একটি উপদেশ।

মূল বা প্রধান পদসমূহঃ ইব্রীয় ১:১-২ পদ, “ঈশ্বর পূর্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাববাদিগণে পিতৃলোকদিগকে কথা বলিয়া, এই শেষ কালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। তিনি ইঁহাকেই সর্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন, এবং ইঁহারই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন।”

ইব্রীয় ২:৩ পদ, “তবে এমন মহৎ এই পরিত্রাণ অবহেলা করিলে আমরা কি প্রকারে রক্ষা পাইব? ইহা ত প্রথমে প্রভুর দ্বারা কথিত, ও যাহারা শুনিয়াছিল, তাহাদের দ্বারা আমাদের নিকটে দৃঢ়ীকৃত হইল।”

ইব্রীয় ৪:১৪-১৬ পদ, “ভাল, আমরা এক মহান মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম প্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।”

ইব্রীয় ১১:১ পদ, “আর বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান, অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি।”

ইব্রীয় ১২:১-২ পদ, “অতএব এমন বৃহৎ সাক্ষিমেষে বেষ্টিত হওয়াতে আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্যপূর্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াই; বিশ্বাসের আদিকর্তা ও সিদ্ধিকর্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি; তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।”

সারসংক্ষেপঃ ইব্রীয় পুস্তকটি তিনটি পৃথক গোষ্ঠীকে সম্বোধন করে: খ্রীষ্টে বিশ্বাসী, অবিশ্বাসীরা যাদের খ্রীষ্টের ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক স্বীকৃতি ছিল এবং অবিশ্বাসীরা যারা খ্রীষ্টের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোন গ্রন্থের কোন অংশে যখন কোন গোষ্ঠীকে সম্বোধন করা হয় তখন তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আর তা করতে ব্যর্থ হলে আমরা শাস্ত্রের বাকি অংশের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত আঁকতে পারি।

ইব্রীয় পুস্তকের লেখক ক্রমাগতভাবে খ্রীষ্টের ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর পরিচর্যার কাজে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের উল্লেখ করেছেন। পুরাতন নিয়মের লেখায়, আমরা বুঝি যিহূদী ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানগুলি প্রতীকীভাবে মশীহের আগমনের দিক নির্দেশনা দেয়। অন্যকথায়, যিহূদী ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানগুলি ছিল আসন্ন বিষয়ের ছায়া। ইব্রীয় পুস্তক আমাদের বলে যে, খ্রীষ্ট যীশু ধর্মের যে কোন কিছুর চেয়ে ভাল। ধর্মের সমস্ত আড়ম্বর এবং পরিস্থিতি খ্রীষ্ট যীশুর ব্যক্তিত্ব, কাজ এবং পরিচর্যার তুলনায় ম্লান হয়ে যায়। এটি হল স্পষ্টভাবে লেখা উক্ত চিঠির বিষয়বস্তুর মধ্যে বিদ্যমান আমাদের প্রভু যীশুর শ্রেষ্ঠত্ব।

যোগসূত্রঃ সম্ভবতঃ নতুন নিয়মের কোথাও পুরাতন নিয়ম ইব্রীয় পুস্তকের চেয়ে বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে না, যার ভিত্তি হিসেবে লেবীয় যাজকবর্গ রয়েছে। ইব্রীয় পুস্তকের লেখক ক্রমাগত পুরাতন নিয়মের বলি উৎসর্গ পদ্ধতির অপর্যাপ্ততাকে খ্রীষ্টে পরিপূর্ণতা এবং সম্পূর্ণতার সাথে তুলনা করেন। যেখানে পুরাতন চুক্তির জন্য বলি উৎসর্গ প্রয়োজন ছিল এবং প্রদত্ত পাপের জন্য একজন মানব পুরোহিতের দ্বারা বছরে একবার প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন ছিল, নতুন চুক্তি খ্রীষ্টের মাধ্যমে সকলের জন্য একবারই বলি উৎসর্গ করে (ইব্রীয় ১০:১০ পদ) এবং যে তাঁর মধ্যে থাকে তার ঈশ্বরের সিংহাসনে সরাসরি প্রবেশের অধিকার রয়েছে।

বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ মৌলিক খ্রীষ্টিয়ান মতবাদে সমৃদ্ধ, ইব্রীদের লেখা চিঠিটি আমাদেরকে ঈশ্বরের “বিশ্বাসী বীরসমূহের” উৎসাহদায়ক উদাহরণ দেয় যারা বিরাট সমস্যা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চেষ্টা করছিল (ইব্রীয় ১১ অঃ)। বিশ্বাসের এই সদস্যেরা ঈশ্বরের নিঃশর্ত নিশ্চয়তা এবং পরম নির্ভযোগ্যতার অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ প্রদান করে। একইভাবে, আমাদের পরিস্থিতি নির্বিশেষে, পুরাতন নিয়মের সাধুদের জীবনে ঈশ্বরের কাজের কঠিন বিশ্বস্ততার উপর ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সমৃদ্ধ প্রতিশ্রুতিতে নিখুঁত আস্থা বজায় রাখতে পারি।

ইব্রীয় পুস্তকের লেখক বিশ্বাসীদের যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করেন, কিন্তু পাঁচটি সতর্কবাণী রয়েছে যার প্রতি আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। অবহেলার বিপদ (ইব্রীয় ২:১-৪ পদ), অবিশ্বাসের বিপদ (ইব্রীয় ৩:৭-৪:১৩ পদ), আধ্যাত্মিক অপরিপক্কতার বিপদ (ইব্রীয় ৫:১১-৬:২০ পদ), সহ্য করতে ব্যর্থ হওয়ার বিপদ (ইব্রীয় ১০:২৬-৩৯ পদ), এবং ঈশ্বরকে অস্বীকার করার অন্তর্নিহিত বিপদ (ইব্রীয় ১২:২৫-২৯ পদ), আর তাই আমরা এই জীবন মুকুটপূর্ণ সেবা কাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, উৎসাহের একটি সতেজ ঝর্ণা এবং শব্দের উৎস, আমাদের খ্রীষ্টিয়ান পদচারণায় অলসতার বিরুদ্ধে ব্যবহারিক সতর্কতা খুঁজে পাই। কিন্তু আরও অনেক কিছু আছে, কারণ ইব্রীয় পুস্তকে আমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের একটি চমৎকার প্রতিকৃতি খুঁজে পাই-যিনি আমাদের মহৎ পরিত্রাণের কারিগর এবং সমাপ্তকারী (গালাতীয় ১২:২ পদ)।

English



বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

ইব্রীয় পুস্তক
© Copyright Got Questions Ministries