প্রশ্ন
১করিন্থীয় পুস্তক
উত্তর
মূল বাক্যাংশ: ১করিন্থীয় পুস্তক
মূল বাক্যাংশের ব্যাখ্যা : আপনি কি ১করিন্থীয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? ১করিন্থীয় পুস্তকটির সব কিছু কি সম্পর্কে লিখিত?
লেখক : ১করিন্থীয় ১:১ পদ প্রেরিত পৌলকে ১করিন্থীয় পুস্তকের লেখক হিসেবে চিহ্নিত করে।
লেখার সময়কাল : ১করিন্থীয় পুস্তকটি আনুমানিক ৫৫ খ্রীষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল।
লেখার উদ্দেশ্য : প্রেরিত পৌল করিন্থে মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মণ্ডলীটি ছেড়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরে, প্রেরিত পৌল করিন্থীয় মণ্ডলী সম্পর্কে কিছূ গোলমেলে খবর শুনেছিলেন। তারা গর্বে পূর্ণ ছিল এবং ব্যভিচারের অজুহাত দিচ্ছিল। আত্মিক দানগুলো অন্যায্যতায় ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং প্রধান খ্রীষ্টিয়ান মতবাদগুলির ব্যাপক মতানৈক্য ছিল। করিন্থীস্থ মণ্ডলীকে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াসে প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের কাছে প্রথম চিঠি লিখেছিলেন যার ভিত্তি-যীশু খ্রীষ্ট।
মূল বা প্রধান পদসমূহ: ১করিন্থীয় ৩:৩ পদ, “এখনও তোমাদের শক্তি হয় নাই, কারণ এখনও তোমরা মাংসিক রহিয়াছ; বাস্তবিক যখন তোমাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিবাদ রহিয়াছে, তখন তোমরা কি মাংসিক নও, এবং মনুষ্যের রীতিক্রমে কি চলিতেছ না?”
১করিন্থীয় ৬:১৯-২০ পদ, “অথবা তোমরা কি জান যে, তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির, যিনি তোমাদের অন্তরে থাকেন, যাঁহাকে তোমরা ঈশ্বর হইতে প্রাপ্ত হইয়াছ। অতএব তোমাদের দেহে ঈশ্বরের গৌরব কর।”
১করিন্থীয় ১০:৩১ পদ, “অতএব তোমরা কি ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”
১করিন্থীয় ১২:৭ পদ, “কিন্তু প্রত্যেক জনকে হিতের জন্য আত্মার আবির্ভাব দ্ত্ত হয়।”
১করিন্থীয় ১৩:৪-৭ পদ, “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে।”
১করিন্থীয় ১৫:৩;৪ পদ, “ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন।”
সারসংক্ষেপ: করিন্থীয় মণ্ডলী বিভেদের দ্বারা জর্জরিত ছিল। করিন্থে বিশ্বাসীরা আত্মিক নেতাদের প্রতি অনুগত দলে বিভক্ত ছিল (১করিন্থীয় ১:১২; ৩:১-৬ পদ)। পৌল করিন্থের বিশ্বাসীদেরকে খ্রীষ্টের প্রতি ভক্তির কারণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন (১করিন্থীয় ৩:২১-২৩ পদ)। মণ্ডলীর অনেকেই মূলতঃ একটি অনৈতিক সম্পর্কের অনুমোদন করছিলেন (১করিন্থীয় ৫:১-২ পদ)। পৌল তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন মণ্ডলী থেকে দুষ্ট লোকটিকে বের করে দেওয়া হয় (১করিন্থীয় ৫:১৩ পদ)। করিন্থের বিশ্বাসীরা একে অপরকে বিচারালয়ে নিয়ে যাচ্ছিল (১করিন্থীয় ৬:১-২ পদ)। পৌল করিন্থীয়দের শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, তাদের খ্রীষ্টিয়ান সাক্ষ্যকে ক্ষতি করার চেয়ে সেখান থেকে সুবিধা গ্রহণ করা ভাল (১করিন্থীয় ৬:৩-৮ পদ)।
পৌল বিয়ে এবং অবিবাহিত জীবন (অধ্যায় ৭), প্রতিমার প্রসাদ (অধ্যায় ৮, ১০), খ্রীষ্টিয়ানের স্বাধীনতা (অধ্যায় ৯), স্ত্রীলোকদের পর্দা বা আবরণ ধারণ (১করিন্থীয় ১১:১-১৬ পদ), প্রভুর ভোজ (১করিন্থীয় ১১:১৭-৩৪ পদ), আত্মিক দানসমূহ (১করিন্থীয় ১২-১৪ পদ) এবং পুনরুত্থানের বিষয়ে করিন্থীয় মণ্ডলীকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন (অধ্যায় ১৫)। করিন্থীয়ের বিশ্বাসীদের তাকে করা প্রশ্ন এবং অন্যায্য আচরণ এবং ভ্রান্ত বিশ্বাসের উত্তর দিয়ে পৌল ১করিন্থীয় পুস্তকটি সংগঠিত করেছিলেন।
যোগসূত্রঃ ১করিন্থীয় পুস্তকের ১০ অধ্যায়ে, পৌল করিন্থীয়ের বিশ্বাসীদের স্বাধীনতার অপব্যবহারের মূর্খতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বিপদ ব্যাখ্যা করতে ইস্রায়েলীয়দের প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর গল্প ব্যবহার করেছেন। পৌল শুধুমাত্র তাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের অভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন (১করিন্থীয় ৯:২৪-২৭ পদ)। তিনি ইস্রায়েলীয়দের বর্ণনা করেন যারা ঈশ্বরের অলৌকিক কাজগুলি দেখে এবং তাদের তত্ত্বাবধান করা- লোহিত সাগরের বিভাজন, স্বর্গ থেকে মান্নার অলৌকিক ব্যবস্থা এবং একটি পাথর থেকে জল- তা সত্ত্বেও তারা তাদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করেছিল, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং পতিত হয়েছিল অনৈতিকতা এবং প্রতিমা পুজাতে। পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীকে ইস্রায়েলীয়দের উদাহরণ লক্ষ্য করতে এবং লোভ ও যৌন অনৈতিকতা এড়াতে এবং খ্রীষ্টকে পরীক্ষা এবং অভিযোগ করার জন্য ( ৯-১০ পদ) উপদেশ দেন। গণনা পুস্তক ১১:৪,৩৪, ২৫:১-৯; যাত্রাপুস্তক ১৬:২, ১৭:২, ৭ প্রভৃতি পদগুলো লক্ষ্য করুন।
বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ করিন্থীয় মণ্ডলী যে সব সমস্যা এবং প্রশ্নগুলির সাথে মোকাবিলা করছিল তা এখনও মণ্ডলীতে বিদ্যমান রয়েছে। মণ্ডলীগুলি আজও বিভেদের সাথে, অনৈতিকতার সাথে এবং আত্মিক দানের ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১করিন্থীয় পুস্তকটি বর্তমান মণ্ডলীর কাছে খুব ভাল লেখা হতে পারত এবং আমরা পৌলের সতর্কবার্তাগুলির প্রতি মনোযোগী হলে এবং সেগুলি নিজেদের উপরে প্রয়োগ করলে ভাল করব। সমস্ত তিরস্কার এবং সংশোধন সত্ত্বেও ১করিন্থীয় পুস্তকটি আমাদের দৃষ্টি যেখানে নিবদ্ধ হওয়া উচিত সেখানে ফিরিয়ে আনে- অর্থাৎ খ্রীষ্টের উপর। সত্যিকার খ্রীষ্টিয়ান প্রেম অনেক সমস্যার উত্তর দান করে (অধ্যায় ১৩)। খ্রীষ্টের পুনরুত্থান সম্পর্কে একটি সঠিক উপলব্ধি যা ১৫ অধ্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে, এবং এর ফলে আমাদের নিজেদের পুনরুত্থান সম্পর্কে একটি সঠিক উপলব্ধি, যা আমাদেরকে আমরা যার মধ্য দিয়ে বিভাজিত ও পরাজিত হই তা থেকে আমাদের নিরাময় করে।
English
১করিন্থীয় পুস্তক